Header Ads

Header ADS

গৌতম বুদ্ধ ও তাঁর প্রতিবিম্ব


Shakyamoni Buddha

ভূমিকা
২৫৬৩ বছর হয়ে গেল গৌতম বুদ্ধের জন্ম। তাঁকে শাক্যমুনি, মহামানব, গৌতম বুদ্ধ, বুদ্ধদেব, তথাগত, ভগবান বুদ্ধ প্রভৃতি নামে চেনে। কিন্তু প্রশ্ন জাগে, বুদ্ধ দেখতে কেমন ছিলেন। হয়তো কেউ জানে না অথচ বিশে^ সকলেই তাঁকে চিনে। নিজের ছবি আঁকা কিংবা মূর্তি গড়ায় তেমন আগ্রহ ছিলেন না বুদ্ধের। তবু সেই সময় রাজা ও প্রজাদের অনুরোধে বুদ্ধমূর্তি নির্মাণের অনুমতি দিলেন বুদ্ধ নিজেই। বুদ্ধ পরিনির্বাণের দু’শো বছর পর যখন আবারও হাজার-হাজার মানুষ বুদ্ধের শরণ নিয়ে দীক্ষিত হলেন বৌদ্ধধর্মে। তারপর নতুন তাগিদে শুরু হল বুদ্ধের মূর্তি গড়া ও ছবি আঁকার কাজ। রাজারা দিলেন অর্থ, প্রজারা অর্ঘ্য। দেশ-বিদেশ থেকে এলেন নামি-দামী শিল্পী আর ভাস্কর। কিন্তু কীভাবে জানা গেল- কেমন দেখতে ছিলেন বুদ্ধ? কীভাবে তৈরী হল- মূর্তি আর ছবি; এই সব প্রশ্নের সমাধান সামান্য ধারণা দিতে চেষ্টা করব এ নিবন্ধে।

গৌতম বুদ্ধ
গৌতম বুদ্ধের ছেলে বেলার নাম সিদ্ধার্থ। গৌতম বুদ্ধের জন্ম আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৬২৫-৬২৩ অব্দে। তার অর্থ বয়সে তিনি যিশু খ্রিস্টের চেয়ে প্রায় ৬০০ বছরের বড় ছিলেন। অবশ্য সময় নিয়ে মতান্তর আছে। বিগত ১৯৫৬ ইংরেজীতে বুদ্ধজয়ন্তীর সময়ে তথাগত বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণের আড়াই হাজার (২৫০০) বর্ষপূর্তি নিয়ে ভারতে তথ্যবিদ প-িতদের মধ্যে এক বির্তকের সৃষ্টি হয়। সে সময় ভারতে বিখ্যাত গবেষক অধ্যাপক ড. প্রবোধ চন্দ্র সেন গ্রিনিজ মানমন্দিরে রক্ষিত চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণের রেকর্ড থেকে সিদ্ধার্থের জন্ম, বুদ্ধত্ব লাভ ও মহাপরিনির্বাণের উল্লেখিত তারিখ-তালিকাÒThe StatesmentsÓপত্রিকায় প্রকাশ করেন। বিশে^র সকল বৌদ্ধ রাষ্ট্র এ সন-তারিখ মেনে নেয় এবং ১৯৫৬ সালে আড়াই হাজার বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বুদ্ধজয়ন্তী উদ্যাপন করেন।
সিদ্ধার্থে জন্ম ঃ ৭ই এপ্রিল, ৬২৫ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে।
বুদ্ধত্ব লাভ ঃ ১০ই এপ্রিল, ৫৯০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দ।
বুদ্ধের পরিনির্বাণ ঃ ২২ শে এপ্রিল, ৫৪৫ খ্রিস্ট পূর্বাব্দ।
সিদ্ধার্থের পিতা শাক্যরাজ শুদ্ধোদন, মাতা রাণি মহামায়া। সন্দেহ নেই সিদ্ধার্থের জন্ম নেপাল লুম্বিনী উদ্যানে। যেখানে স¤্রাট অশোক একটি পাথর পিলার ৩য় শতাব্দীতে গেঁথে দিয়ে সিদ্ধার্থের জন্মস্থান চিহ্নিত করেন। স্থানটিকে ইউনিসকো কর্তৃক স্বীকৃত World Heritage site. 
বুদ্ধত্ব লাভের স্থান বুদ্ধগয়া নৈরঞ্জনা নদীর পাশে বোধিবৃক্ষ তলে। বুদ্ধগয়া অবস্থান ভারতে বিহার রাজ্যে। স¤্রাট অশোক নির্মিত ৮৪ হাজার মধ্যে প্রথম চৈত্য স্থাপন করেন এখানেই। এখানে রয়েছে সুউচ্চু মহাবোধি মহাবিহার যেটি ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে অর্থাৎ গুপ্তযুগে স্থাপিত। এ স্থানটিও ইউনিসকো কর্তৃক স্বীকৃত World Heritage site. 
গৌতম বুদ্ধ ৮০ বছর বয়সে পরিনির্বাণ লাভ করেন। স্থানটি ভারতে উত্তর প্রদেশে কুশিনগরে। এখানে রয়েছে পরিনির্বাণ স্তুপ এবং বুদ্ধের শ্মশান স্তুপ। ইতিহাসের পাতায় গৌতম বুদ্ধ অর্হৎ, সম্যকসম্বুদ্ধ, মনোবিদ ও মহাপ্রজ্ঞাবান ছিলেন।

গৌতম বুদ্ধের সময়ে বুদ্ধমূর্তি নির্মাণ
পৃথিবীতে ছবি আঁকাআঁকি গৌতম বুদ্ধের অনেক আগেরও ছিল। ছবি হল মনের ভাব প্রকাশের আরেকটি মাধ্যম। প্রাচীন কালে ছবি আঁকা হতো গুহায় বা বড় পাথরের গায়ে। Ancient Hisory তালিকায় ঃtop 10 oldest art ever discovered গবেষণা নিবন্ধ হতে জানা যায়, প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ৭ লাখ বছর আগে ছবি আঁকা শুরু হয়। ÒBhumbetka and darki-chattan cupulesÓ আবিষ্কৃত চিত্র শিল্পের সবচেয়ে পুরানো। ভালো লাগার বিষয়কে দীর্ঘদিন ধরে রাখতে মানুষ হয়তো ছবি আঁকেন, মূর্তি গড়েন। বুদ্ধকে ভালো লাগার কারণ বুদ্ধ নিজেই। সাধানার প্রথম পর্যায় হতে ভালো লেগে গিয়েছিল মগধরাজ বিম্বিসারের। সারনাথে প্রথম ধর্ম প্রচারের শ্রোতা সংখ্যা কেবল পাঁচজন ভিক্ষু হলেও অল্প কয়েকদিনের মধ্যে ৬০ জন ভিক্ষু হয়ে যায়। তাঁরা সবাই অর্হৎ, মুক্ত পুরুষ। বুদ্ধ তাঁদেরকে নির্দেশ দিলেন, “তোমরা চারদিকে ছড়িয়ে যাও। পৃথিবী সকল মানুষের মঙ্গলের জন্য, সুখের জন্য ধর্ম কথা বলো। কোন রকম লাভ-সৎকারের জন্য নয়, এক একজন ভিন্ন ভিন্ন দিকে যাও।” কালক্রমে বুদ্ধের অনুগত সংখ্যা বাড়তে থাকে। এর একটি ছোট কারণ হলো বুদ্ধের শিষ্যবৃন্দ। তাঁদের কথা, আচরণ, ব্যবহার মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল। সব শিষ্যরা বুদ্ধের প্রতিনিধিত্ব করেছিল। বুদ্ধের কথা বলতেন। বুদ্ধও ভারতের বিহার প্রদেশে ঘুরে ঘুরে ধর্মপ্রচার করেছেন। সারনাথ, রাজগীর, বৈশালী, সংকুল পর্বত প্রভৃতি স্থানে বর্ষাবাস যাপন করেছেন। সব শ্রেণির মানুষের সাথে দেখা হতো। বুদ্ধ তাদেরকে ধর্ম কথা বলতেন। লোকেরা অনুপ্রাণিত হয়ে প্রতিদিন বুদ্ধের সাথে সাক্ষাৎ করতেন। তৎকালিন ছয় (৬) জন সাধু পুরুষ থাকলেও বুদ্ধের জনপ্রিয়তা ছিল সবার উর্দ্ধে। সপ্তম বর্ষাবাসের আগে অর্থাৎ মাকে ধর্মকথা শোনাতে তুষিত স্বর্গে যাবার আগে একদিন এক অনন্য অলৌকিক শক্তি দেখালেন শ্রাবস্তীবাসীকে। যাকে বলে যুগল ঋদ্ধি। শ্রাবস্তীর ৭ কোটি মানুষ দেখলো, বুদ্ধের প্রতি আগ্রহ দ্বিগুণ বেড়ে গেল। বুদ্ধকে এক নজর দেখবে বলে দলে দলে মানুষ ছুটে আসতে লাগল। কিন্তু বুদ্ধ গেছেন মায়ের কাছে। লোকেরা বুদ্ধকে দেখতে না পেয়ে হতাশ হলেন। হলেন দুঃখিত, ব্যথিত। মানুষের মনে বুদ্ধের অভাববোধ জায়গা থেকে বা বুদ্ধের অবর্তমানকে বর্তমান করতে বুদ্ধপ্রতিবিম্ব বা প্রতিরূপ তৈরির প্রয়োজনীয়তা সৃষ্টি হয়।
বহুকাল আগে থেকে পৃথিবীতে মূর্তি নির্মাণের চর্চা ছিল। Ancient Hisory তালিকায় ঃtop 10 oldest art ever discovered গবেষণা নিবন্ধ হতে জানা যায়, প্রায় খ্রিষ্টপূর্ব ৩৮ হাজার বছর আগের ÒLion Man of the Hohlenstein stadelÓ-নামের একটি মূর্তি পাওয়া যায়, যা আবিষ্কৃত মূর্তির মধ্যে সর্বপ্রথম বলে ধারণা করা হয়। সুতরাং বুদ্ধের সময়েও মূর্তি নির্মাণ চর্চা ছিল কিন্তু বুদ্ধকে নিয়ে মূর্তি নির্মাণ বুদ্ধের অনুমতি ছিল না। তিনিও কোনো রকম আগ্রহ দেখাননি। বুদ্ধের জীবন ধারা পাঠ করে জানা যায়, বুদ্ধকে কেউ কোন কিছু প্রার্থনা না করলে বা বুদ্ধের নিকট কোন অভিযোগ না করলে, বুদ্ধ তা নিয়ে কোন কিছু বলতেন না। মানুষ, দেবতা বা অন্য কোন সত্ত্বগণ প্রার্থনা করলে, বুদ্ধ তখন সঙ্গে সঙ্গে তাদের কথা শুনতেন, বুঝে নিতেন এবং সমাধান সহ উপযোগী উপদেশ দিতেন। মানুষের প্রয়োজনে, সমাজের প্রয়োজনে বুদ্ধ সব সময় মানুষের পাশে ছিলেন। একসময় শ্রদ্ধাবান লোকেরা বুদ্ধমূর্তি নির্মাণের জন্য প্রার্থনা করা হলে, বুদ্ধ তাঁর প্রতিবিম্ব নির্মাণে অনুমতি দিয়েছিলেন।  
পালি সাহিত্যের বুদ্ধমূর্তি নির্মাণ নিয়ে বেশ কিছু ইতিহাস পাওয়া যায়। শ্রীমৎ জিনবংশ মহাস্থবির অনুদিত ‘জাতক পঞ্চাশক’ গ্রন্থে ‘বট্টঙ্গুলি রাজ জাতকে’ বুদ্ধমূর্তি নির্মাণ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া গেছে। বুদ্ধ সপ্তম বর্ষাবাসে মাকে এবং অন্যান্য দেবতাদের ধর্মদেশনার করার জন্য তুষিত স্বর্গে গিয়েছিলেন। ঐ সময় বহুলোক পূজা উপকরণ নিয়ে শ্রাবস্তী জেতবন বিহারে এসেছিলেন। কোশল রাজ প্রসেনজিত স্ব-পরিষদ বুদ্ধকে দেখতে এসেছেন। কিন্তু দেখতে না পেয়ে তাঁরা সকলেই দুঃখিত হলেন, কষ্ট পেলেন। তিন মাস পর স্বর্গ থেকে নেমে আসলেন বুদ্ধ। রাজা বুদ্ধকে বললেন, শ্রাবস্তীবাসী বহু লোক আপনাকে দেখতে, পূজা করতে এসেছিলেন। আপনাকে দেখতে না পেয়ে দুঃখভারাক্রান্ত মনে চলে গেছেন। রাজা আরো বললেন, “ভান্তে ভগবান! ভক্তবৃন্দ আপনার দেখা না পেয়ে দুঃখিত হয়েছে, ব্যথিত হয়েছে। আপনি যখন অনুপাদিশেষ নির্বাণ (মৃত্যুর পরে) হবেন তখন আপনাকে না দেখে লোকেরা কিভাবে সুখী হবেন? এখনো দুঃখিত হয়, কষ্ট পায়। সুতরাং আপনাকে দেখার জন্য, পূজার জন্য আপনার প্রতিরূপ নির্মাণে অনুমতি প্রদান করুন।” বুদ্ধ রাজার কথা শুনে জগতের হিত ও মঙ্গলের জন্য বললেন, “মহারাজ, যে কোন শ্রদ্ধাবান ব্যক্তি আমার রূপ নির্মাণ করতে পারেন।” বুদ্ধের এ অনুমতি দেবার পর বুদ্ধ তাঁর অতীত জন্মের কাহিনী ‘বট্টঙ্গুলি রাজ জাতক’ ধর্মদেশনা করলেন। এ জাতকের সূচনা আলোচনাতেই বুদ্ধমূর্তি নির্মাণে বুদ্ধের সম্মতি পাওয়া যায় । বুদ্ধের অনুমতি পেয়ে রাজা প্রসেনজিত চন্দন কাঠের বুদ্ধমূর্তি নির্মাণ করেছিলেন। ধারণা করা হয়, বৌদ্ধধর্মের ইতিহাসে মানুষের তৈরী এটাই প্রথম বুদ্ধমূর্তি। কিন্তু বুদ্ধের জীবদ্দশায় বুদ্ধমূর্তি পূজা প্রচলন হয়নি, এটা নিশ্চিত। 
একই কথা চীনা পরিব্রাজক বা বৌদ্ধ ভিক্ষু ফাহিয়েনের লিখিত  Ò A record of Buddhist’s kingdomÓ MÖ‡š’ E‡jøL K‡i‡Qb-When Buddha went up to Traystrinssas heaven and preached the law for the benefit of his mother, after he had been absent for ninety days Raja Prasenjit longing to see him, caused an image of him to be carved in CHANDAN wood, put it in the place where Buddha usualy sat, when Buddha on return entered the vihara, this image immediately left its place and came forth to make room for him. Buddha said to it. ‘Return to your seat. After I have attained to parinirvana. You will serve as a pattern of my body.’ This was the very first of all the images of Buddha and that which men subsequently copied. Buddha then removed his seat to and dwelt in a small vihara on the south side of the other, a different place from that containing the image, twenty spaces distance from it. উপরিল্লিখিত তথ্যের আলোকে বলা যায়, কোশলরাজ প্রসেনজিত, তিনিই সর্বপ্রথম বুদ্ধমূর্তি নির্মাণ করেছিলেন।
কলকাতার লেখিকা চিত্র দেব রচিত ‘বুদ্ধদেব কেমন দেখতে ছিলেন’ বইতে পাওয়া যায়- বুদ্ধের পরিনির্বাণের প্রায় ৩০০ বছর পর চীনা বৌদ্ধ ভিক্ষু ফাহিয়েন (৩৩৭-৪২২ খ্রিষ্টাব্দ) ভারত ভ্রমণ করতে এসেছিলেন। তিনি রাজা প্রসেনজিতের তৈরী করা চন্দনকাঠের বুদ্ধমূর্তিটি দেখেছেন বলে ব্যক্ত করেন। ফাহিয়েনের দু’শো বছর পর ভারতবর্ষে আসেন চীনের আর এক বিখ্যাত বৌদ্ধ ভিক্ষু হিউয়েন সাঙ্ (৬০২-৬৬৪ খ্রিষ্টাব্দ)। তিনি কালের মতান্তরে জানেন, প্রথম বুদ্ধমূর্তি নির্মাণ করে কৌশাম্বী রাজা উদয়ন। গল্পটা একই। বুদ্ধ তাঁর মাকে তিন মাস যাবৎ ধর্মকথা শোনাবার জন্যে তুষিত স্বর্গে গিয়েছিলেন। তিন মাস মানে নব্বই দিন, অনেকদিন। রাজা উদয়নের পক্ষে যা অসহনীয়। বুদ্ধকে না দেখে তিনি থাকতে পারছিলেন না। রাজা উদয়ন অর্হৎ মৌদ্গাল্যায়ন স্থবিরকে অনুরোধ করলেন। অর্হৎ মোদ্গাল্যায়ন স্থবির এক শিল্পীকে দিয়ে বুদ্ধমূর্তি নির্মাণ করেন। হিউয়েন সাঙ্ বিশ^াস করতেন, উদয়নের মূর্তিটিই প্রথম বুদ্ধমূর্তি। সেজন্যে দেশে ফেরার সময় অন্যান্য জিনিসপত্রের সাথে রাজা উদয়ন নির্মিত বুদ্ধমূর্তি অনুকরণে চন্দন কাঠের আরেকটি বুদ্ধমূর্তি নির্মাণ করে নিয়ে গিয়েছিলো। পরবর্তীতে মূর্তিটি চীন থেকে জাপানে নিয়ে যাওয়া হয়। বুদ্ধমূর্তিটি বর্তমানে জাপানে Seiryoji Templeএ আছে। [ উৎস-The Origin of the Buddha Statues & Images.] আমার অনুসন্ধানে মানুষের তৈরী প্রথম বুদ্ধমূর্তি নির্মাতা হিসেবে রাজা প্রসেনজিতের নাম যতটা তথ্য প্রমাণ পেয়েছি, ততটা তথ্য পায়নি রাজা উদয়নের।
পালি সাহিত্যের আরও কয়েকটি কাহিনী পায়, লঙ্কার রাজকুমারী যিনি আগের জন্মে বুদ্ধের ভক্ত ছিলেন, অষ্টশীল পালন করতেন। মৃত্যুর পর শীল পালনের পূণ্যফলে জন্ম নিলেন রাজকুমারী হয়ে। বুদ্ধের কথা শোনার পর বুদ্ধের একটি ছবি পাবার জন্য নিবেদন করলেন। তিনি প্রার্থনা জানালে, বুদ্ধ তাঁর ঋদ্ধিশক্তি প্রয়োগ করে একটি বস্ত্র খন্ডে নিজের ছবি রাজকুমারীকে পাঠিয়েছিলেন। এ গল্পটি আছে কাশ্মীরের কবি ক্ষেমেন্দ্র লেখা “মুক্তালতাবদানে।
বুদ্ধের জীবিতকালে আরাকানে একটি মূর্তি তৈরী করা হয়েছিল। শিল্পী পিতলের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরী করে যখন কিছুতেই জোড়া দিতে পারছেন না, তখন ব্যাকুল হয়ে মনে মনে বুদ্ধকে ডাকতে লাগলেন। করুণাময় বুদ্ধ এলেন আরাকানের আকিয়াবে। মূর্তিটিকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে বুদ্ধ সাতবার আলিঙ্গন করলেন। তারপর মূর্তিটি নিঁখুতভাবে জোড়া লাগল। কে আসল আর কে নকল বোঝা গেল না।
বুদ্ধের পরিনির্বাণের পরবর্তী মূর্তি নির্মাণ ঃ (মৌর্য যুগ ও কুষাণ)
মৌর্য যুগের অশোক আমল (খ্রিস্টপূর্ব ৩০৪-২৩২)। শ্রীলঙ্কায় বুদ্ধধর্মের ইতিহাস নিয়ে লেখা ‘মহাবংস’ বইতে বলা হয়েছে, একদিন স¤্রাট অশোক মহাকাল নামে এক অলৌকিক শক্তির নাগরাজার কথা শুনলেন। তিনি নাকি বুদ্ধকে স্বচক্ষে দেখেছেন। অশোক নাগরাজকে শিকলে বেঁধে আনতে বললেন। তাঁকে এনে স-সম্মানে সিংহাসনে বসিয়ে হাত জোড় করে অশোক বললেন, ‘হে নাগরাজ, আপনি তথাগতকে নিজের চোখে দেখেছেন। সেই মহাজ্ঞানী তাপস, যিনি ধর্মচক্র প্রবর্তন করেছেন অনুগ্রহ করে তাঁকে সশরীরে আমাদের একবার দেখান’। নাগরাজ তখন বত্রিশটি মহাপুরুষ লক্ষ্মণযুক্ত ও আশিটি ক্ষুদ্রলক্ষণযুক্ত বুদ্ধের আলৌকিত অবয়ব সৃষ্টি করলেন। উজ্জ্বল আলোতে বুদ্ধের সারা শরীর ঘিরে রইলো। অশোক আনন্দিত মনে ভাবতে লাগলেন, নাগরাজের সৃষ্টি করা বুদ্ধের অবয়ব যখন এতই জ্যোর্তিময়, আসল বুদ্ধের শরীর নিশ্চয় আরও বেশি উজ্জ্বল ছিল। এ ঘটনা পর থেকে অশোক বুদ্ধমূর্তি নির্মাণে উদ্যোগ নিয়েছিলেন। একই কাহিনী পায় রাঙ্গামাটি রাজবন বিহার হতে ভদন্ত মেত্তাবংশ ভিক্ষু রচিত ‘মারবিজয়ী অর্হৎ উপগুপ্ত মহাস্থবির’ বইতে। তবে গল্পে নাগরাজ বদলে ‘মার’ এবং অশোক নামের জায়গায় ‘অর্হৎ উপগুপ্ত’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি। বাকি সব গল্প একই।
পালি সাহিত্য অনুসারে এই ঘটনার কিছুকাল আগে অশোক বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত হয়। কলিঙ্গ যুদ্ধে জয় লাভ করলেও তাঁর মন বিষণœ ছিলো। একদিন বৌদ্ধ সন্ন্যাসী ন্যাগ্রোধ শ্রমণের সাক্ষাৎ পেয়ে মনে শান্তি ফিরে পায়। এরপর থেকে তিনি বুদ্ধধর্মে দীক্ষিত হন। অশোকের আমল বৌদ্ধধর্ম ইতিহাসের স্বর্ণযুগ। 

আলোচনা করি, কুষাণ যুগ (২৮-২৩০ খ্রিষ্টাব্দ)। বৌদ্ধশিল্প ও স্থাপত্য বিকাশে স¤্রাট কণিষ্কের অবদান ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত। খ্রিষ্টীয় প্রথম শতকে কুষাণ আমলে গান্ধার অঞ্চলে গ্রিক ভাবধারা এক শিল্পরীতির উদ্ভব হয়, যা মাথুরা ও গান্ধার শিল্পকলা নামে পরিচিত। এ শিল্পরীতি অনুসরণ করে স¤্রাট কণিষ্কের রাজত্ব কালে প্রথম বুদ্ধমূর্তি তৈরীর সূচনা হয়। কুষাণ যুগ হল বুদ্ধমূর্তির বিকাশের স্বর্ণ যুগ। বেদিতে রেখে বুদ্ধমূর্তি পূজো কুষাণ যুগেই শুরু। ইতিপূর্বে মূর্তি পূজো ছিল প্রাক-আর্য সংস্কৃতির অঙ্গ। মূর্তি সৃষ্টির আগে স্তুপ, প্রতীক, পদচিহ্ন, বোধিবৃক্ষ মূর্তির মতোই পূজো পেয়েছিল। পোড়ামাটি-পাথরের মূর্তিকে পূজোর আসনে নিয়ে আসার অবদান মহাযানী বৌদ্ধরা। তাঁদের আগ্রহে স¤্রাট কণিষ্ক বিভিন্ন উপাদানে বুদ্ধমূর্তি নির্মাণ করেন। B.R. Mani wjwLZ The Kushan Civilization (Urban development and Material (Urban Development and Material Culture) বইতে কণিষ্কের সময়ে অনেক বুদ্ধপ্রতিবিম্ব নির্মিত হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। যেমন-
(১) শাক্যসিংহ বুদ্ধ : খৃ: পূ: ১ম শতাব্দী।
(২) তিন ধরণের অভয়মুদ্রা বুদ্ধমূর্তি : খৃ: পূ: ২য় শতাব্দী।
(৩) দাঁড়ানো বুদ্ধের চিত্র সম্বলিত স্বর্ণমুদ্রা : খৃ: পূ: ১ম শতাব্দী।
(৪) পাথরে খুদাই করা বোধিবৃক্ষ পূজারত, পূজারীবৃন্দ : খৃ: পূ: ২য়-১ম শতাব্দী।
(৫) পাথরে খুদাই করা বুদ্ধের পদচিহ্নকে কিছু মহিলা পূজা ও বন্দনারত : খৃ: পূ: ১ম শতাব্দী।
(৬) পাথারে খুদাই করা ধর্মচক্র প্রতীককে পূজা : খৃ: পূ: ২য়-১ম শতাব্দী।
এসব প্রাচীন বুদ্ধমূর্তির সন্ধান পাওয়া গিয়েছে তাইওয়ানের তাইপে শহরে। সেটি রয়েছে সেখানকার ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব হিস্ট্রি-তে। আবার ভারতে জাতীয় জাদুঘরেও পাওয়া যায়। আর প্রমাণ করা প্রয়োজন নেই যে স¤্রাট কণিষ্ক বৌদ্ধধর্মের একজন বড় সমর্থক ছিল। 
কুষাণ স¤্রাজ্যের একটি ভূমি স্পর্শ মুদ্রা বুদ্ধমূর্তি পাওয়া গেছে। মাথায় রয়েছে রাজকীয় মুকুট। এ মুদ্রাটি নির্মাণকাল খ্রিস্টপূর্ব ছত্রিশ কিংবা পঁয়ত্রিশ-এ। সাল তারিখ চীনা ভাষায় লেখা। সন্দেহ নেই যে কুষাণ স¤্রাজ্য অবশ্য চীনের সীমা স্পর্শ করেছিল। কনিষ্কের দুই রাজধানী কপিশা (আফগানিস্তান) ও পুরুষপুর (পাকিস্তান) বুদ্ধমূর্তি নির্মিত হয়েছে। কাজেই বলা যায়,  স¤্রাট কণিষ্কের পৃষ্ঠপোষকতায় বৌদ্ধ ভাস্কর্য ও স্থাপত্য শিল্প উৎকর্ষতা লাভ করে সমগ্র ভারতবর্ষ এবং বহির্বিশে^ ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। কুষাণ স¤্রাটের প্রবর্তিত শিল্প ও স্থাপত্য রীতি বৌদ্ধ ধর্মপ্রচারক ও শিল্পচার্যদের মাধ্যমে চীন, তিব্বত, মঙ্গোলিয়া, কোরিয়া ও জাপানে প্রসার লাভ করে। এই সমস্ত তথ্য অমরজ্যোতি মুখোপাধ্যায়ের ‘কুষাণ স¤্রাট কণিষ্ক’ বইতে বিস্তারিত পাওয়া যায়।
গান্ধারশিল্পের সময়সীমা ঐতিহাসিকরা ধরেছেন, খ্রিস্টপূর্ব ১ম শতক থেকে সপ্তম খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। মূল বুদ্ধমূর্তিটি মাথুরার শিল্পীদের মতোই গড়েছেন গান্ধার শিল্পীরা। স্বাস্থ্যবান, অতি সুদর্শন, হাতে ধর্মচক্র প্রর্বতনের মুদ্রা, চীবর পরার ধরণ সবই মাথুরার শিল্পীদের অনুকরণ। মাটি থেকে পদ্মের অবস্থান অনেক ওপরে যেন পিলসুজের ওপরে তিন-চার সারি পদ্মের পাপড়ির ওপরে বুদ্ধের আসন বা বেদি। তার ওপরে বুদ্ধ বসেছেন। দু’পাশে এবং মাথার কাছে ছোট ছোট অনেক মূর্তি, দেবতা বা রাজন্যবর্গের। কেউ এনেছেন মালা, কেউ অবাক চোখে চেয়ে আছেন বুদ্ধের দিকে, শুনছেন উপদেশ, বুদ্ধের দৃষ্টি সামনের দিকে প্রসারিত। মাথার পিছনে জ্যোতিচক্র আছে, তার পিছনে বড় বড় লম্বাটে পাতা। তাতে আবার তেঁতুল পাতার মতো ছোট ছোট পাতা। বোধিবৃক্ষের নীচে বসে আছে বুদ্ধ। গান্ধার শিল্পীদের চোখে বুদ্ধ হলেন একজন ‘আদর্শরূপ’। যেন এক মহান বীরপুরুষ। যাঁর জন্মের আগে মা হাতির স্বপ্ন দেখতেন, জন্মেই যিনি সাত পা হাঁটেন তা ছাড়া যাঁর জীবন অলৌকিক ঘটনা ও চমৎকারিত্বে ভরা তিনি বীরপুরুষ নয়তো কি? বুদ্ধ বীর পুরুষ ছিলেন তাতে সন্দেহ নেই তবে অসিযুদ্ধে অকাতরে নরহত্যা করে নয়, মানসিক শক্তির জোরে ‘মার’কে পরাস্ত করে কামনা-বাসনা জয় করে বোধি লাভ। এরকম ব্যক্তি জগতে দুর্লভ শুধু নয় কঠিনতম দুর্লভ।

বিভিন্ন মুদ্রায় বুদ্ধমূর্তি ঃ
১। ভূমিস্পর্শ মুদ্রা

ইংরেজীতে Earth touching বলে। ডান হাত ভূমিকে স্পর্শ করা, বাম হাত কোলে পদ্মাসনে প্রতিষ্ঠিত। বুদ্ধগয়া মহাবোধি মহাবিহারে যে বুদ্ধমূর্তি রয়েছে সেটি ভূমিস্পর্শ মুদ্রা।  

২। ধ্যান মুদ্রা

এটা সমাধি মুদ্রা বলা যেতে পারে। বাম হাতের উপর ডান হাত রেখে চোখ বন্ধ অবস্থায় ধ্যানী বুদ্ধ। মহাযান বৌদ্ধরা মেডিসিন বুদ্ধ বলে আবার জাপানীরা অমিতাভ বুদ্ধ বলে। 

৩। অভয় মুদ্রা

এটি নির্ভীকতা বা আশীর্বাদের অঙ্গভঙ্গি যা সুরক্ষা, শান্তি, উদারতা এবং অভয় দানের প্রতীক। 

৪। ধর্মচক্র মুদ্রা

এটি ধর্মচক্র মুদ্রা হিসেবে পরিচিত। বুদ্ধের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ মূহুর্তগুলির একটি। বুদ্ধত্বলাভের পর সারনাথে পঞ্চবর্গীয় ভিক্ষুদের প্রথম ধর্মদেশনা প্রদান করেন। যে দেশনার নাম ধর্মচক্র প্রবর্তন সূত্র। যে অবস্থায় বুদ্ধ দেশনা দিয়েছেন সেটা ধর্মচক্র মুদ্রা।

৫। বিতর্ক মুদ্রা

এটি বুদ্ধের শিক্ষা বিষয়ক আলোচনা প্রতীক। তর্জনি ও বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে চেপে ধর্মের গভীর বিষয় আলোচনারত প্রতীক। এটিকে বিতর্ক মুদ্রা বলে।

৬। অঞ্জলি মুদ্রা

এটি নমস্কার মুদ্রা বা অঞ্জলি মুদ্রা হিসেবে পরিচিত। অভিবাদন, প্রার্থনা, বিনোদনের অঙ্গভঙ্গি প্রতিনিধিত্ব করে। মতবাদ আছে, এই মূর্তি দিকে তাকালে ন¤্র-ভদ্র হয়, রাগ প্রশমিত হয়।

৭। বজ্র মুদ্রা

এই অঙ্গভঙ্গিমা জ¦লন্ত বজ্রপাতকে নির্দেশ করে যা পাঁচটি উপাদানের প্রতীক। বায়ু, জল, আগুন, পৃথিবী এবং ধাতু। বাম হাতে তর্জনি অঙ্গুলিকে বাম হাতে মুঠো চেপে ধরে সম্মুখ ভাগে প্রদর্শিত।

৮। সিংহ শয্যায় মুদ্রা বা Reclining Buddha

গৌতম বুদ্ধের আরেকটি প্রতিবিম্ব তৈরী হয়ে থাকে সিংহ শয্যায় মুদ্রামূর্তি।  

৯। বরদা মুদ্রা

বরদা শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো-প্রত্যাশা। এই মুদ্রা উপহার, স্বাগত, দান, সমবেদনা এবং আন্তরিকতা প্রতিনিধিত্ব করে। ডান হাত সম্মুখে দিকে প্রসারিত বাম হাত কোলে পদ্মাসনে স্থাপন করা।

১০। করনা মুদ্রা

করণা শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো-করণীয় কাজকর্ম। এটি খারাপ প্রবৃৃত্তি মনোভাব বা নেতিবাচক চিন্তা দূর করা প্রতীক। এই মুদ্রা দিকে তাকালে মানুষের অসুস্থতা মানসিক বা নেতিকবাচক চিন্তা দূর হয় বলে মতবাদ আছে। বৃদ্ধাঙ্গুলি সাথে মধ্যমা ও অনামিকা অঙ্গুলি চেপে ধরে থাকে। তর্জনি ও কনিষ্ঠা অঙ্গুলি উঁচিয়ে।

উপসংহার ঃ
বুদ্ধমূর্তি হল বৌদ্ধজগতে ঐক্যের প্রতীক। যখনই কোন স্থানে বুদ্ধমূর্তির সামনে আসেন তখনই বৌদ্ধ বিশে^র লোকেরা মাথা নত হয়ে তাকে বন্দনা জানায়-কি থেরবাদী; কি মহাযানী! বিশে^র সমগ্র বৌদ্ধদের মধ্যে বুদ্ধের করুণাঘন মূর্তি মৈত্রী, সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের প্রতীক হয়ে বৌদ্ধ বিশ^কে একত্রিত করেছে। বুদ্ধমূর্তি মানুষকে মানবতাবাদী কর্মে উদ্বুদ্ধ করে এবং ত্যাগ ও সেবার মাধ্যমে বহুজন হিতায় বহুজন সুখায় আত্মনিয়োগের বড় প্রেরণা জোগায়। একুশ শতকে বড় একটি খারাপ ঘটনা হয়ে গেল। আফগানিস্তানে বামিয়ানের বুদ্ধমূর্তি (৫৪৪ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত) ছিল বিশে^র সবচেয়ে বড় বুদ্ধমূর্তির মধ্যে অন্যতম। ২০০১ সালের মার্চ মাসে মিথ্যাদৃষ্টিক তালিবানদের হাতে ধ্বংস হয়েছিল। কিন্তু মৈত্রীবাদী বৌদ্ধরা এর প্রতিবাদ তেমন করেনি। কেননা, বুদ্ধ আমাদের ক্ষান্তি শিখিয়েছেন; ক্ষমা, মৈত্রী, শান্তি থাকতে ও রাখতে শিখিয়েছেন। বুদ্ধের কারণে বৌদ্ধরা শান্তি ও মৈত্রীবাদী। তাই জগতে শান্তি বিরাজ করতে বুদ্ধমূর্তি প্রতিষ্ঠা ও পূজা করা প্রয়োজন। বুদ্ধমূর্তি এমন একটি প্রতীক যা মানুষের অন্তরকে শীতল করে।


সমাপ্ত

2 comments

Unknown said...

খুব ভালো হয়েছে

Unknown said...

খুব ভালো লিখেছেন, ভান্তে

কবিতা

অন্তপ্রাণ আমি নিঃশ্বাসের শেষ প্রাণবায়ু অনুভব করছি, যখন নশ্বর দেহে কোভিড ঊনিশ ঘ্রাণ পেয়েছি। আমি হৃদয়ের অসহায়ত্বের আর্তনাদ শুনছি, যখন ফুসফুস ...

Theme images by LUGO. Powered by Blogger.