আষাঢ়ী পূর্ণিমার ইতিবৃত্ত ও আমাদের শিক্ষণীয়
আজ পহেলা শ্রাবণ, সন চৌদ্দশ ছাব্বিশ, মঙ্গলবার,
ইংরেজী জুলাই মাসে ষোল তারিখ, দুইহাজার ঊনিশ।
আজ আকাশে ভরা পূর্ণিমার চাঁদ দেখা যাবে। আষাঢ় মাস হোক বা না হোক, আজ আষাঢ়ী পূর্ণিমা। আজ বৌদ্ধদের জন্য পবিত্র দিন, পুণ্যকর্ম করার দিন। এদিনে মহামানব গৌতম বুদ্ধ জীবনীর সাথে বেশ কয়েকটি ঐতিহাসিক ঘটনা সম্পৃক্ত রয়েছে। যেমন-১। রাণি মহামায়া স্বপ্ন দেখতে পাওয়া যা বুদ্ধ আগমণের বার্তা, ২। রাজ কুমার সিদ্ধার্থের গৃহত্যাগ, ৩। সিদ্ধার্থের সাধনালব্ধ ধর্মতত্ত্ব আনুষ্ঠানিক প্রচার, ৪। জনগণের সম্মুখে বুদ্ধের শ্রেষ্ঠ অলৌকিক শক্তি প্রকাশ, ৫। গৌতম বুদ্ধ তাবতিংস স্বর্গে গমন, ৬। থেরবাদী বৌদ্ধ ভিক্ষুদের বর্ষাবাস আরম্ভ এবং ৭। গৃহীগণ বৌদ্ধ ভিক্ষুদের বর্ষাচীবর প্রদান। এইসব পুণ্যস্মৃতি বিজড়িত শুভ আষাঢ়ী পূর্ণিমা বিশ্ব থেরবাদী বৌদ্ধদের নিকট অত্যন্ত তাৎপর্যময়। এই দিনে বৌদ্ধরা খুব সকাল বৌদ্ধ বিহারে যায়, বুদ্ধপূজা, বুদ্ধ স্নান, ভিক্ষুদের চীবর দান, আহার দান, ভিক্ষুদের নিকট ধর্মোপদেশ শোনা, পঞ্চশীল, অষ্টশীল এবং ধ্যান অনুশীলন করে দিনটি অতিবাহিত করেন। এই সমস্ত সৎকর্মের মাধ্যমে বৌদ্ধদের মনে ত্যাগ, সুচরিত্র গঠন, সংযমতা, নির্লোভতা, মন-মানসিকতাকে সরল শান্ত এবং ভদ্র হতে শিক্ষা লাভ করেন।
১। রাণি মহামায়া স্বপ্ন দেখতে পাওয়া যা বুদ্ধ আগমণের বার্তা
অবশ্য অনেকে জানা আছে যে, শাক্য রাজ্য নেপালে। কপিলাবস্তু নামক রাজ্যের রাজধানী। এই রাজ্যে রাজা শুদ্ধোদন ও রাণি মহামায়া। উভয়ে ধার্মিক, সম্পদ, ক্ষমতা, মন্ত্রিপরিষদ ও প্রজাদের নিয়ে বেশ আনন্দের ছিলেন। কিন্তু তাঁদের একটাই সমস্যা, সংসার জীবন দীর্ঘ হলেও কোন সন্তান জন্ম হয়নি এখনো। রাজ ঐতিহ্য অনুসারে একদিন আষাঢ়ী পূর্ণিমা উৎসব করেছিলেন সবাই মিলে। উৎসব শেষ করে রাণি ঘুমিয়ে পড়লেন। রাতটি অবশ্যই আষাঢ়ী পূর্ণিমা ছিল। রাণি এক অপূর্ব সুন্দর স্বপ্ন দেখলেন। চারজন স্বর্গের দেবতা রাণিকে তাঁর শয়ন আসনসহ তুলে নিয়ে গিয়েগেছে হিমালয়ে। সেখানে ¯œান করায়ে নতুন বস্ত্র ও অলংকার দিয়ে সাজিয়ে আবার ঘুমাতে দেয় দেবতারা। হিমালয়ের চূঁড়া থেকে এক সাদা হাতি তার শুঁড়ে এক সাদা পদ্ম ফুল নিয়ে আসেন। রাণিকে সাতবার প্রদক্ষিণ করে রাণির ডান পেটের দিকে পদ্ম ফুলটি প্রবেশ করে দিল। রাণি শিহরিত হয়ে স্বপ্ন ও ঘুম ভেঙ্গে গেল। স্বপ্নের ফলাফল জানতে চাইলে রাজ অভিজ্ঞগণ জানালেন সুখবর যে রাজ প্রাসাদে পুত্র সন্তান আসছেন। রাণি সন্তান সম্ভাবনা হলেন। দীর্ঘ দিনের চেপে থাকা বেদনা মোচন হল এবং রাজা শুদ্ধোদন খুশিতে আত্মাহারা হলেন। এই আনন্দ বার্তা শুধু শাক্যরাজ্যের নয় গোটা পৃথিবীর জন্যও আনন্দ। কেননা, ইতোমধ্যে জানাগেছে যে, শিশুটি বড় হয়ে মহাপুরুষ হবেন।
আমাদের শিক্ষনীয় ঃ
একটা ভদ্র সন্তান প্রত্যেক পিতা-মাতার জন্য আনন্দ আর গৌরবের। প্রত্যেক মা-বাবা চাই, তাদের সন্তান যেন জ্ঞানী-গুণী হোক, আলোকিত সন্তান হোক। কিন্তু আপনি কতটা প্রস্তুত? আমাদের মনে রাখতে হবে, ভাল বস্তু ধারণ করতে ভাল পাত্র চাই। এখানে পাত্র মা-বাবা আর বস্তু হল সন্তান। মা-বাবা অবশ্যই সৎ, ধার্মিক, সচেতন মিষ্টভাষী ও সংসারী হতে হবে। এই সমস্ত পরিবারে সন্তানরা ভাল কিছু করতে সুযোগ ও পরিবেশ পায়। কেননা, শিশুরা প্রথম পাঠ গ্রহণ করে মা-বাবা ও পরিবার থেকে।
বৌদ্ধরা জন্মান্তর বিশ^াস করেন। সিদ্ধার্থ জন্মগ্রহণ করার পূর্বে বহু জন্মে সৎ কর্ম করে মহাপুরুষত্ব লাভ করেছেন। তিনি তাবতিংস স্বর্গ থেকে রাজা শুদ্ধোদন পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছেন। স্বর্গ থেকে চ্যুত হওয়ার পূর্বে তিনি কোন্ দেশে, কার রাজ্যে, কোন্ মা-বাবার ঘরে জন্মগ্রহণ করবে-এইসব বিষয়ে অনসন্ধান করেছেন। সুতরাং ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে মা-বাবা ধার্মিক ও পারমীবান হলে ভদ্র, দেব সন্তান লাভ করা যায়। কেবল আপনি ভাল হোন, আপনি একটি সুন্দর পরিবার গঠন করতে পারবে।
২। শাক্যরাজ কুমার সিদ্ধার্থের গৃহত্যাগ
সিদ্ধার্থ সংসার করেছেন ১৯ বছর বয়সে। তিনি বিয়ে করেছেন একই গোত্রিয় রাজকন্যা যশোধরাকে। তাঁদের ১০ বছর সংসারে রাহুল নামে এক ছেলে আছে। একদিন সমস্ত রাজ্যসীমা ঘুরে দেখতে ইচ্ছা হল। রাজ্য ঘুরতে গিয়ে তিনি দেখতে পেলেন রাজপ্রাসাদের আনন্দের বিপরীত মানুষের বৃদ্ধত্ব কষ্ট, রোগের কষ্ট, মৃত্যুর দুঃখ এবং তিনি দেখতে পেলেন অন্যরকম দৃশ্য সন্ন্যাসী যার কোন পিছু টান নেই, নেই কারোর জন্য দুঃখ। যতগুলো তিনি দৃশ্য দেখেছেন ততটা এর কারণ জানতে পারল। বৃদ্ধত্ব, রোগ, মৃত্যু ইত্যাদি দুঃখ থেকে রেহাই পাবার স্থায়ী সমাধানের জন্য গৃহত্যাগ করতে ইচ্ছা হল। এক রাতে তিনি রাজ প্রাসাদে মা-বাবা, স্ত্রী-পুত্র, সিংহাসন সবটুকু রাজসুখ ছেড়ে সন্ন্যাসী হল। সেই দিন ছিল পূর্ণিমার রাত। আষাঢ়ী পূর্ণিমা।
আমাদের শিক্ষণীয়:ঃ
আমাদের চলার পথে কিছু কিছু নতুন অভিজ্ঞার সম্মুখিন হয়। সেটি আপনার জন্য দুঃখজনক বা আনন্দজনক দুটোই হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে প্রথম কাজ হবে, ধৈর্য্যরে সাথে সব কিছু পর্যবেক্ষণ করা। হঠাৎ কোনভাবে সিদ্ধান্ত না নেয়া। দুঃখজনক হলে এবং সেটি যদি আপনাকে খুব ভাবায় তাহলে আপনি এর কারণ খুঁজে বের করুন। এর কারণ অনুসন্ধান করুন। দেখবেন এর সমাধান বের করতে তেমন কষ্ট হবে না এবং জীবনে যে কোন খারাপ পরিস্থিতিতে আপনি নিজেকে সামলাতে পারবেন। ভয় না পেয়ে সাহসী হবেন, হতাশা না হয়ে মানসিক স্বস্তি লাভ করবেন।
৩। সিদ্ধার্থের সাধনালব্ধ ধর্মদর্শন আনুষ্ঠানিক প্রচার
কুমার সিদ্ধার্থ ৬ বছর সাধনা করেছেন। তাঁর বয়স এখন ৩৫ বৎসর। অবশেষে সাধনার চূড়ান্ত সাফল্য লাভ করেছেন। অর্থাৎ তিনি জগতে দুর্লভ “বুদ্ধত্বজ্ঞান” অর্জন করেছেন। বুদ্ধ হয়েছে মানে তিনি বিশুদ্ধি মানুষ হয়েছে। বুদ্ধ হয়ে তিনি একটা মানবত্ব লাভের পথ খুঁজে পেয়েছেন। তাঁর এই নব ধর্মদর্শন সারনাথে অবস্থানরত পাঁচজন শিষ্যদের উপদেশ দিবেন। পাঁচ জন শিষ্য হল-কৌ-িণ্য, বপ্প, ভদ্রিয়, মহানাম ও অশ^জিৎ। বুদ্ধ পৌঁছে গেলেন সারনাথে। তাদেরকে প্রথমবারের মত তাঁর আদর্শ উপদেশ দিলেন। এ ঘটনার মাধ্যমে বুদ্ধ ধর্ম প্রচার আরম্ভ করলেন।
আমাদের শিক্ষণীয় ঃ
জ্ঞান দান একটি মহৎ এবং গৌরবের কাজ। আপনার জানা কোন বিষয় অপরকে যত জানাতে পারবে তত বেশি জ্ঞানার্জন বাড়বে। জীবনের জন্য ভাল কিছু আপনার জানা থাকলে সেটি অপরকে বলা। আপনার মাধ্যমে আরেক জন উপকার হচ্ছে-এটা যে আনন্দ খুব ভেতরের এবং পরম সুখ।
৪। জনগণের সম্মুখে বুদ্ধের শ্রেষ্ঠ অলৌকিক শক্তি প্রকাশ
গৌতম বুদ্ধ ধর্মপ্রচার করেছিলেন পঁয়তাল্লিশ বছর। একদিন শ্রাবস্তী থাকতে তিনি জনগণের সামনে তাঁর অন্যতম অলৌকিক শক্তি দেখালেন। ঘোষণা দিলেন শ্রাবস্তীর গন্ডা নামক আম গাছের বাগানে অলৌকিক শক্তি দেখাবেন, যে অলৌকিক নাম “যমক ঋদ্ধি” অর্থাৎ দু’টি বিপরীত শক্তি একসাথে দেখাবেন। শাস্ত্রপাঠে জানা যায়, গন্ড নামে এক মহিলার নামে বাগানের নাম গন্ডাম্র উদ্যান। নির্দিষ্ট দিনে লোকেরা সমাগম হলেন। বুদ্ধ এসে দেখলেন বাগানে একটিও আম নেই। গন্ড উপাসিকাকে বুদ্ধ বললেন, তুমি একটি আমের বীজ নিয়ে এসো। বুদ্ধের নির্দেশে আম বীজ আনা হলে বাগানে মাঝখানে তা পুঁতে রেখে তার উপর বুদ্ধের হাত ধোঁয়ার পানি দিলে সঙ্গে সঙ্গে সেই বীজ থেকে একটি আম গাছ গজিয়ে উঠে এবং গাছটি ৮০ হাত সমান দীর্ঘ হয়ে চারদিকে শত শত ডালপালা আর সবুজ পাতায় ভরেছে। তখন বাগানটি আগের চেয়েই বেশি সুন্দর হয়েছে। বুদ্ধ বাগান থেকে শূন্যে উঠে গেলেন। খোলা আকাশে ভাসমান অবস্থায় কখনো দাঁড়িয়ে, কখনো বসা অবস্থায়, কখনো শোয়া অবস্থায় আবার হাঁটাহাঁটি অবস্থায় লোকেদের ঋদ্ধি দেখালেন। উপর থেকে বৃষ্টির পানি নিচের থেকে জ¦লন্ত আগুন সহ নানাভাবে যমক ঋদ্ধি দেখালেন। মানুষ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন আর সাধু সাধু সাধু ধ্বনি দিতে লাগলেন। শাস্ত্র পাঠে আরও জানা যায়, সেইদিন মানুষ ও দেবতা একসাথে বুদ্ধের অলৌকিক দৃশ্য দেখেছিল আর দেবতা মানুষ একে অপরের দেখতে পেয়েছিল।
আমাদের শিক্ষণীয় ঃ
আমাদের মধ্যম পথ মেনে চলতে হবে। আমরা অনেক সময় যশ খ্যাতি ও মান-সম্মান পাবার জন্য আমরা যা নয় তার চেয়ে বেশি কিছু দেখায়। কিন্তু যা কিছু নিজের অর্জিত নয়, যা কিছু সত্যিকার অর্থে আমি ভাল মতে জানিনা সেটা আপনি কৌশলে বা বল প্রয়োগ করে যত কিছু, যেভাবেই দেখান সেটা কোন না কোন সময় গিয়ে ধরা পড়বেন। কথায় আছে ‘অল্প বিদ্যা ভয়ংকর’। আবার, আপনার অর্জিত বিষয় প্রয়োজনে অবশ্যই ব্যবহার এবং প্রয়োগ দু’টোই করবেন। সবাই যা দেখায় তা নয়, আপনি এমন কিছু করে দেখান যা সবার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা আর ব্যাতিক্রম। এতে আপনাকে সবার মতো হবে না, সবাই আপনার মতো হবে। তবে কথা থাকে যে, অপরের ক্ষতি না করে। এই বিষয়গুলো আপনার জীবনে একটি শিক্ষণীয় যা আপনার আবেগকে কন্ট্রোল করে রাখতে সহায়তা করবে।
৫। গৌতম বুদ্ধ তাবতিংস স্বর্গে গমন
গন্ডাম্র বৃক্ষমূলে যমক প্রতিহার্য ঋদ্ধি দেখানো পর মহাকারুণিক বুদ্ধ তাঁর মাকে ধর্ম উপদেশ দেবার জন্য ঋদ্ধি প্রয়োগ করে তাবতিংস স্বর্গে যান। সেখানে তিনি তিন মাস অবস্থান করেন। বুদ্ধের সপ্তম বর্ষাবাস এই তাবতিংস স্বর্গেই কেটেছে। সেখানে তিনি তাঁর ধর্মের উচ্চশিক্ষা অভিধর্ম দেশনাকালে মাতাসহ আশি কোটি দেবতার ধর্ম উপলব্ধি হয়েছিল। শাস্ত্র পাঠে আরও জানা যায় যে, বুদ্ধ তাবতিংস স্বর্গ থেকে প্রতিদিন আহারের জন্য পৃথিবীতে আসতেন। আহার শেষে গৃধ্রকূট পর্বতে দুপুর বেলায় বিশ্রাম নিতেন এবং বিশ্রাম শেষে অর্হৎ সারিপুত্রকে স্বর্গে তাঁর দেশিত অভিধর্ম পুনরায় ব্যাখ্যা করে শোনাতেন। বুদ্ধ চলে যাওয়ার পর সন্ধ্যা পাঁচশতজন অর্হৎ ভিক্ষুদের নিকট জটিল বিষয়গুলো আলোচনা করে শোনাতেন। এই পাঁচশতজন শিষ্যই বুদ্ধের প্রথম অভিধর্মধারী ভিক্ষু।
আমাদের শিক্ষণীয় ঃ
আমাদের কৃতজ্ঞতার চেতনা থাকতে হবে। যার কৃতজ্ঞতাবোধ নেই তার জীবন কোন এক পর্যায়ে থেমে যাবে। এই ঘটনার অনুকরণে যদি বলি, বিশেষ করে মাকে কৃতজ্ঞতা দেখাতে হবে। আপনি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উচ্চ চাকরি করছেন এ সময় যদি মা-বাবাকে ভুলে যান তাহলে আপনাকে বলা হবে শিক্ষিত মূর্খ। মায়ের প্রতি আপনার সর্বোচ্চ ত্যাগ দিতে হবে। মাকে সব সময় পাশে রাখতে হবে। বিভিন্ন কারণে মা দূরে থাকলেও তাঁকে গিয়ে দেখাশোনা, যতœ ও আপনার সর্বোচ্চ ত্যাগ দিয়ে মাকে দেখতে হবে। সন্তানের কাছে মায়ের অবদান সীমাহীন।
৬। থেরবাদী বৌদ্ধ ভিক্ষুদের বর্ষাবাস আরম্ভ
গৌতম বুদ্ধ বৌদ্ধ ভিক্ষুদের জন্য বর্ষাবাস নিয়ম চালু করেছেন। এটি আষাঢ়ী পূর্ণিমার একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। ধর্ম প্রচারের প্রথম অবস্থায় ভিক্ষুরা সারাবছরই ধর্মপ্রচারের নিয়োজিত থাকতেন। তখন বর্ষাবাসের বিধান ছিল না। যেহেতু বর্ষাকালে ভিক্ষুদের গৈরিক বসন বা চীবর বৃষ্টিতে ভিজে ও মাটি, বালি লেগে নোংরা হয়, রাস্তাঘাট কর্দমাক্ত হয়ে পিচ্ছিল বলে পথ চলার ঝামেলা হয়। সবুজ ঘাস, লতা, ক্ষেতের আইল, জমির ফসল ইত্যাদি ভিক্ষুদের পদাঘাতে নষ্ট হয়। এসব বিষয় চিন্তা করে গৌতম বুদ্ধ আষাঢ়ী পূর্ণিমার দিন ভিক্ষুদের জন্য বর্ষাবাস যাপনের নিয়ম চালু করেছেন। এই সময় নির্দিষ্ট বিহারে তিন মাস অবস্থান করবেন, দীর্ঘ সময় ধরে শীল পালন ও ধ্যান অনুশীলনের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি প্রচেষ্টা, একই বিহারে অবস্থানকারী ভিক্ষুগণের মধ্যে পারস্পরিক সুসম্প্রীতি ও সৌহার্দবোধ বিকশিত হয়। বর্ষাবাস শেষে বুদ্ধের সদ্ধর্ম এবং নিজের অর্জিত শীল সমাধি ও প্রজ্ঞার ধর্ম প্রচার করতে পারবে।
গৃহীরাও এই সময় তিন মাসব্যাপী উপোসথ শীল পালন করে আত্ম নিয়ন্ত্রণ ও নৈতিকতার উন্নতি করার চেষ্টা করেন। সব কিছু মিলে আষাঢ়ী পূর্ণিমার আগমনে সংযম ও চিত্ত নিয়ন্ত্রণ সময় বলে এই পূর্ণিমা গুরুত্ব রয়েছে অনেক।
৭। বর্ষাচীবর বা ওয়াছো চীবর দান
বর্ষাকালে ভিক্ষুদের চীবর ভিজে যায়, অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়। তখন ভিক্ষুগণ চীবরের অভাব অনুভব করেন। এই চিন্তা করে মহাউপাসিকা বিশাখা আজীবন ভিক্ষু ও ভিক্ষুণীদের চীবর দান করেছিলেন। এই অনুপ্রেরণা থেকে বর্তমান শ্রদ্ধাবান শ্রদ্ধাবতী দায়ক-দায়িকাগণ বর্ষাবাসে বর্ষাচীবর বা ওয়াছো চীবর দান করতে দেখা যায়। এই ঘটনা থেকে আমাদের শিখতে হবে যে, ত্যাগের মাধমে মোহ-তৃষ্ণা, লোভ-লালসা, কামনা-বাসনা মুক্ত জীবন গঠন করা।
“সব্বে সত্তা সুখীতা হোন্তু”
জগতে সকল প্রাণী সুখী হোন।
No comments
Post a Comment