Header Ads

Header ADS

ব্যাকরণ শিক্ষণ-শিখনে আরোহী পদ্ধতি এবং অবরোহী পদ্ধতির উপযোগীতা


ব্যাকরণ শিক্ষণ-শিখনে আরোহী পদ্ধতি এবং অবরোহী পদ্ধতির উপযোগীতা।




ভূমিকা 
বঙ্গদেশে প্রায় দু’শো বছরের বেশি সময় ধরে রচিত হয়েছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলা ব্যাকরণগ্রন্থ। ব্যাকরণ পাঠদানকে মনোবিজ্ঞানসম্মত ও গতিশীল করার জন্য ব্যাকরণ শিক্ষকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। ব্যাকরণ সম্পর্কে শিক্ষকের স্বচ্ছ ধারণা, আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ এবং শিক্ষকের প্রাণবন্ত ও আকর্ষণীয় উপস্থাপন ব্যাকরণকে একটি নীরস বিষয় থেকে সরস বিষয়ে পরিণত করতে পারে।
ব্যাকরণ পাঠদান পদ্ধতি
নিয়ম-নীতির বেড়াজালে ব্যাকরণ আবদ্ধ। ব্যাকরণ ভাষার প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে বলে একে কিছুটা নিরস বলে মনে হয়। তাই ব্যাকরণ পাঠ শিক্ষার্থীদের নিকট একটি কঠিন ও নীরস বিষয় হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু ব্যাকরণ পাঠদান পদ্ধতিকে প্রাঞ্জল ও সাবলীল করে শিক্ষার্থীদের কাছে উপস্থাপন করা একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য শিক্ষকদের। ব্যাকরণ পাঠদানকে সহজবোধ্য করতে বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। তা নিম্নরূপ-
১। পাঠ্যপুস্তক ভিত্তিক পদ্ধতি
২। ভাষা ভিত্তিক পদ্ধতি
৩। প্রসঙ্গক্রমিক পদ্ধতি
৪। অবরোহী পদ্ধতি
৫। আরোহী পদ্ধতি
৬। আরোহ-অবরোহ পদ্ধতি
নিম্নে ব্যাকরণ শিক্ষণ-শিখনে আরোহী পদ্ধতি এবং অবরোহী পদ্ধতির উপযোগীতা সম্পর্কে আলোচনা করা হল।

অবরোহী পদ্ধতি 
মূলত কোনো বিবৃতি থেকে সেটির মূল বক্তব্যে পৌঁছার জন্য গৃহীত প্রক্রিয়াকে অবরোহী পদ্ধতি নামে গণ্য করা হয়েছে। এই পদ্ধতিতে- “সূত্র থেকে উদাহরণে’ যাওয়া যায় বলে ব্যাকরণের কোনো সূত্রকে শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরলে তারা তা আয়ত্ত করে। তারপর সেটিকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন উদহরণ ও দৃষ্টান্তের মধ্যে প্রয়োগ করে তার নির্ভুলতা নির্ণয় করতে পারে।
সূত্র ঃ অ-কার পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। 
সূত্রের প্রয়োগ : নীল(অ)+আকাশ//অ+আ=//নীলাকাশ। 
স্বীকৃত সিদ্ধান্ত থেকে বিশেষ সিদ্ধান্তে পোঁছানো, তথ্য সাধারণ সত্য থেকে বিশেষ সত্যে উপনীত হওয়ার এই পদ্ধতিদে শিক্ষার্থীরা প্রথমে ব্যাকরণের বিভিন্ন বিষয়ের সূত্রগুলো আয়ত্তে আনার চেষ্টা করে এবং পরে বিভিন্ন উদাহরণের মধ্যে সূত্রগুলো প্রয়োগ শুদ্ধতা যাচাই করে।

অবরোহী পদ্ধতি সুবিধা ও অসুবিধা
সুবিধা
১। বাংলা ব্যাকরণিক সূত্র শিখন ও সূত্রের প্রয়োগে দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
২। ভাষা দক্ষতা বৃদ্ধিতে অবরোহী পদ্ধতি খুবই সহায়ক
৩। স্বীকৃত সিদ্ধান্ত থেকে বিশেষ সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়।
৪। স্বীকৃত সূত্র শুদ্ধতা যাচাই করা যায়।
৫। এই পদ্ধতিতে পাঠ  গ্রহণের আকর্ষণ করে।
অসুবিধা
১। এই পদ্ধতিতে শিক্ষাথীদের কোনো সক্রিয় ভূমিকা থাকে না।
২। নিজস্ব বুদ্ধি, যুক্তি ও চিন্তা প্রয়োগের কোনো অবকাশ থাকে না।
৩। ত্রুটিপূর্ণ ও অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত।
৪। এই পদ্ধতি সূত্রভিত্তিক ও মুখস্থ নির্ভর, এতে শিক্ষার্থীরা বুদ্ধি বিকাশ ঘটে না।
৫। সূত্রের আধিক্য প্রয়োগের ফলে কখনো কখনো শিক্ষার্থীদের মাঝে বিরক্তিভাব চলে আসে।

আরোহী পদ্ধতি 
এটি অবরোহী পদ্ধতির বিপরীত প্রক্রিয়া। এটির মূল কথা হলো জানা থেকে অজানা, মূর্ত থেকে বিমূর্ত, সহজ থেকে কঠিন, উদাহরণ থেকে সূত্র, বিশেষ থেকে সাধারণ মতে উপনীত হওয়া। এতে উদাহরণ পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে সূত্র বা সংজ্ঞা গঠন করতে হয়। এই পদ্ধতিতে একটি প্রমাণিত সূত্রকে গ্রহণ করা হয়। প্রাথমিকভাবে গাণিতিক ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও বাংলা ব্যাকরণ পাঠদানেও এই পদ্ধতি ফলপ্রসূ হতে পারে। 
উদাহরণ পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে সূত্র বা সংজ্ঞা গঠন করতে হয় আরোহী পদ্ধতিতে-
<‘উদাহরণ থেকে সূত্র’>
আরোহী পদ্ধতি সুবিধা ও অসুবিধা
সুবিধা
১। ব্যাকরণ পাঠ সহজ, সরল, সরস, সার্থক ও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।
২। এই প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা সক্রিয়া হয়ে ওঠে।
৩। শিক্ষার্থীর তার বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে নতুন তত্ত্ব ও তথ্য উদ্গাটন করতে পারে। 
৪। পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ জ্ঞান বৃদ্ধি পায়
৫। এই পদ্ধতিতে পাঠ  গ্রহণের আকর্ষণ করে।
অসুবিধা
১। এই পদ্ধতিতে পাঠদানে বেশি সময় লাগে।
২। বারবার প্রশ্নের সম্মুখিন এবং উত্তর প্রদান করতে হয়। 
৩। শিক্ষার্থীর মাঝে প্রশ্নোত্তর ভীতি সৃষ্টি হয়।
৪। এই পদ্ধতি সূত্র প্রয়োগে দক্ষতা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৫। পাঠদানে বেশি সময় লাগার কারণে কখনো কখনো শিক্ষার্থীদের মাঝে বিরক্তিভাব চলে আসে।

উপসংহার
উপরোক্ত আলোচনা বলা যায়, ব্যাকরণ শিক্ষাদানে অবরোহ ও আরোহ দু’টি পদ্ধতিই একটি ার একটির পুরিপূরক হিসেবে অনুসৃত হয়েছে। এ পদ্ধতিতে প্রথমে শিক্ষার্থীদের নিকট কিছু উদাহরণ উত্থাপন করা হয়, উল্লেখিত উদারহণগুলো পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে শিক্ষার্থীগণ যুক্তি ও বুদ্ধি প্রয়োগ করে মূল সূত্র ও সংজ্ঞা আবিষ্কারে মনোনিবেশ করে। সূত্র গঠন শেষে অবরোহ পদ্ধতিতে সূত্রের প্রয়োগ সম্পর্কিত অনুশীলন চলে।

সমাপ্ত

সহায়ক গ্রন্থ তালিকা
১।  মওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম,-শিক্ষা সাহিত্য ও সংস্কৃতি, খায়রুন প্রকাশনী, ফেব্রুয়ারী, ২০০৬, ঢাকা।
২। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ^বিদ্যালয়, বি.এড বাংলা শিক্ষণ-২, ঢাকা।
৩। মোঃ মুজিবুর রহমান,-শ্রেণী পাঠদানের আধূনিক পদ্ধতি ও কৌশল এবং শ্রেনী ব্যবস্থাপনা, ফেব্রুয়ারী, ২০০৫, প্রভাতী লাইব্রেরী, ঢাকা। 



No comments

কবিতা

অন্তপ্রাণ আমি নিঃশ্বাসের শেষ প্রাণবায়ু অনুভব করছি, যখন নশ্বর দেহে কোভিড ঊনিশ ঘ্রাণ পেয়েছি। আমি হৃদয়ের অসহায়ত্বের আর্তনাদ শুনছি, যখন ফুসফুস ...

Theme images by LUGO. Powered by Blogger.