Header Ads

Header ADS

শান্তি ও সম্প্রীতি রক্ষায় বৌদ্ধধর্ম


পৃথিবী যেন একটি বৃহৎ ফুলের বাগান। যেখানে একটি মাত্র ফুল নয়, বহু বিচিত্র ফুলের সমারোহে সজ্জিত। তাই পৃথিবীর এত সুন্দর। আমাদের বুঝতে হবে- একটি মাত্র ফুল ও একটি রংঙের ফুল দিয়ে বাগান শোভা পায় না। বিচিত্র ফুল ও বিভিন্ন সুগন্ধিযুক্ত ফুলের সমন্বয় এবং সুসজ্জিত থাকলে একটি পরিপূর্ণ বাগান হয়। আমাদের পৃথিবী বহু জাতিগোষ্ঠী ও বহু ধর্মের সমন্বয়ের দ্বারা সুসজ্জিত বলেই বিচিত্র থাকা সত্ত্বের সুন্দর। যেখানে বেঁচে থাকার একে অপরের নির্ভরশীল। বন প্রকৃতির যেমন মানুষের উপর পক্ষান্তরে মানুষ যেমন বন প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল। ভাষা, আচরণ, সংস্কৃতি যত কিছুই ভিন্ন থাকুক আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা একে অপরের নির্ভরশীল। একজনকে বাদ দিয়ে বা বঞ্চিত করে আপনি পূর্ণতা পাবেন না। যেটা মানুষ হিসেবে এড়িয়ে যাওয়া সমীচীন নয় সেটা আপন করে নিলে সুখী শুধু আপনি একাকী হবেন না, এতে করে সবাই সুখী হবে। ধর্মের বাণী অবশ্যই আমাদের মন্যষ্যত্ব শিক্ষা দিবে, অমনুষ্যত্ব, জাতিভেদ ও ধর্মের নামে বিভাজন শিক্ষা দেন না।  
কুমার সিদ্ধার্থ মাতাপিতা, স্ত্রী-পুত্র, পিতার রাজ্য ও সিংহাসন, ধন-সম্পদ, ভোগ-বিলাস কিছুরই অভাব ছিল না তাঁর। সব রকমের দুঃখ থেকে মুক্তির উদ্দেশ্যে ভোগ- লালসা, রাজ্যসুখ ত্যাগ করে সাধনার মাধ্যমে সিদ্ধি লাভ করে মুক্ত পুরুষ বুদ্ধ হয়েছেন। দয়া, করুণা, সহমর্মিতা, অন্যের ধর্ম বিশ^াসের প্রতি শ্রদ্ধা, ভ্রাতৃত্ববোধ, সামাজিক ন্যায়বোধ, সামাজিক কল্যাণ, রাষ্ট্র উন্নতি, নৈতিকতা জীবন ইত্যাদি বৌদ্ধধর্মের আদর্শ। বৌদ্ধধর্ম বিশ^ মানবতার ধর্ম। বিশ^মৈত্রী ও করুণার মূর্তিমান পুরুষ গৌতম বুদ্ধ। বুদ্ধের বিশ^ নন্দিত বাণী “সব্বে সত্তা সুখীতা হোন্তু” জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক। শুধু মানুষ সুখী হোক তাই নয়- মানুষ ছাড়াও বহু রকমের দেখা-অদেখা প্রাণী সুখ কামনা করেছেন। বুদ্ধ বলেছেন- 
‘মাতা যেমন একমাত্র সন্তানকে নিজের জীবন দিয়ে রক্ষা করে,
                              সেভাবে সকল জীবের প্রতি অনেক মমতা ও মৈত্রী পোষণ করবে।’ 
                                                                                                                         -(করণীয় মেত্ত সুত্ত)
মহামানব বুদ্ধের এই একটি মাত্র বাণী অনুশীলন ও প্রতিপালন করলে সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ^শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যায়। বুদ্ধের এরূপ অসংখ্য শান্তির বাণী রয়েছে- যে বাণী মানুষকে দিতে পারে অভূতপূর্ব সহনশীলতা আর মহাকরুণা এবং দিতে পারে মানুষে মানুষে ও দেশে-দেশে সুসম্প্রীতির সহাবস্থান। ছোট-বড়, দীর্ঘ-খাটো, দেখা-অদেখা, নারী-পুরুষ, ভূত-প্রেত, শত্রু-মিত্র পরিজন সকলে বিপদ, রোগ-শোক সব ধরণের অশুভ থেকে মুক্ত হোক, দৈনন্দিন জীবনে এভাবে যাদের চিন্তা ও কাজকর্মে অনুশীলন করেন, তারা কি কখনো অন্যের ক্ষতি করতে পারে? বুদ্ধের শিক্ষা হল মৈত্রী, করুণা, মুদিতা ও উপেক্ষা যেখানে মৈত্রী শব্দের অর্থ মিত্র বা বন্ধুত্বপূর্ণ ভালবাসা, করুণা অর্থ দয়া বা অনুকম্পা, মুদিতা শব্দের অর্থ সুখে-দুঃখে সহানুভূতি এবং উপেক্ষা শব্দের অর্থ সুখে-দুঃখে অবিচল থাকার চেতনা। শান্তি-সম্প্রীতি, পরিচ্ছন্ন ও নির্মল সমাজ বিনির্মাণে মহামানব গৌতম বুদ্ধের এই চারটি শিক্ষা অনন্য। 
আজ মানুষে মানুষে, সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে, রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে যে ব্যবধান সৃষ্টি হয়েছে, তাতে বিশে^ কোথাও শান্তি নেই, স্বস্তি নেই, নেই কারো জান-মালের নিরাপত্তা। মানুষের মধ্যে আজ দেখা দিয়েছে পশুর মতো পাশবিক আচারণ, মানুষ হয়ে উঠেছে নির্দয়-নিষ্ঠুর। নির্বোধ ও নির্লজ্জ মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সমাজে আজ দেখা দিয়েছে হিংসা-বিদ্বেষ, মারামারি, হানাহানি, সন্ত্রাস, ডাকাতি, ছিনতাই, ধর্ষণ, পরের সম্পদ লুটপাত ইত্যাদি। বর্তমান পৃথিবীতে কোন ধর্মের লোকেরা শান্তি নেই। ব্যক্তির ইচ্ছা শক্তির কাছে ধর্মের বাণী গুলো অসহায় হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। সারা পৃথিবীর এই অসহায় অবস্থায় উদ্বিগ্ন। 
আজকের দিনে আমরা শান্তির কথা, মৈত্রীর কথা চারদিকে এবং যখন তখন শুন্তে পাচ্ছি। কিন্তু কিছু কিছু সুবিধাবাদীদের কারণে নষ্ট হচ্ছে শান্তি। তারা কখনো সমাজপতি, কখনো রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে সমাজের শৃঙ্খলা নষ্ট করছে। তারা তাদের ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের জন্য অনেক সময় মুখে শান্তির বাণী বলে আর লোকের আড়ালে বিচিত্র ধ্বংসকর বোমা বানাচ্ছে আর আত্মঘাতি হামলা চালাচ্ছে। অস্ত্র হাতে নির্দ্বিধায় গুলি চালাচ্ছে। তারা সাময়িক আনন্দ লাভ করলেও কখনো চিরকাল সুখে হতে পারবে না। বৌদ্ধধর্ম ও পার্বত্য বৌদ্ধ ভিক্ষুরা এদের কখনো প্রশ্রয় দেয় না, দেবে না। বরং তাদের ধিক্কার জানাই। 
মানুষই হল সমাজের ও রাষ্ট্রে এক একটি অঙ্গ। সেই মানুষ যদি সৎ না হয়, সেই মানুষের মন থেকে যদি কুচিন্তা ও অশুভ শক্তি দূর না হয়, সেই মানুষ যদি পঞ্চশীল অনুসরণ না করে-মোট কথা ব্যক্তি মানুষের মন থেকে হিংসা-বিদ্বেষ নির্মূল নাহলে বিশ^শান্তি চিরকালই মানুষের নাগালের বাইরে থেকে যাবে। তাদের উদ্দেশ্যে বুদ্ধ বলেছেন-
“পৃথিবীতে শত্রুতার দ্বারা শত্রুতা উপশম হয় না, মিত্রতার দ্বারাই শত্রুতা উপশম হয়।” 
                                                                                                                                  -ধম্মপদ : ৫
বুদ্ধের অমূল্য বাণী অহিংসাই হল পৃথিবীতে যুদ্ধের বিভিষীকা ও ভয়বহতা প্রতিহত করার উত্তম পন্থা। এই বাণীর অনুশীলন যতই বাড়বে, মানুষের ব্যক্তিগত বা জাতিগত হিংসা বিদ্বেষ ততই শেষ হতে থাকবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, আপনি সুখে আছেন মানে সবাই সুখী তা নয়, বরং সবাই সুখে থাকলেই আপনার সুখ ও নিরাপদ জীবন দুটোই নিশ্চিত হয়।
পৃথিবীতে আজীবন কেউ আধিপত্য করতে পারে না, জীবন ক্ষণিকের জন্য। প্রাণবায়ু চলে গেলে সঙ্গে কিছুই নিতে পারে না। আমাদের জীবনকে অর্থবহ করতে আসুন সবাই মিলে মন-কে সচেতন ও আলোকিত করি। অন্যায়-অপরাধমূলক কর্মকে প্রশয় না দিই। মানুষকে ধর্ম দিয়ে মূল্যায়ন নয়, মূল্যায়ন করি সুন্দর মননশীল মানবসত্ত্বাকে। আমাদের মানবিক মনুষ্যত্ব গুণাবলি দিয়ে পৃথিবীকে সুন্দর করি।  

“সব্বে সত্তা সুখিতা হোন্তু-জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক”



No comments

কবিতা

অন্তপ্রাণ আমি নিঃশ্বাসের শেষ প্রাণবায়ু অনুভব করছি, যখন নশ্বর দেহে কোভিড ঊনিশ ঘ্রাণ পেয়েছি। আমি হৃদয়ের অসহায়ত্বের আর্তনাদ শুনছি, যখন ফুসফুস ...

Theme images by LUGO. Powered by Blogger.